Ticker

5/recent/ticker-posts

ভাষা কাকে বলে? ভাষার বৈশিষ্ট্য এবং ভাষা কত প্রকার ও কী কী?

ভাষার ধারণাটির কোন সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেয়া কঠিন, কেননা যে কোন কিছুর সংজ্ঞা ভাষার মাধ্যমে দিতে হয়। মানুষ তার মনের ভাব অন্যের কাছে প্রকাশ করার জন্য কন্ঠ ধ্বনি এবং হাত, পা, চোখ ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে ইঙ্গিত করে থাকে। বর্তমান পৃথিবীতে ৭০৯৯ টি ভাষা প্রচলিত আছে ।তার মধ্যে বাংলা একটি ভাষা। ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলা পৃথিবীর চতুর্থ বৃহৎ মাতৃভাষা। 

ভাষা কাকে বলে বা ভাষা কি? 
মানুষের যোগাযোগের সহজাত মাধ্যম হলো ভাষা। মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য মানুষ বাগযন্ত্রের সাহায্যে যেসব অর্থবোধক ধ্বনি উচ্চারণ করে, তাকে ভাষা বলে। 

তবে ভাষা শুধু মৌখিক কোন বিষয় নয়, বরং লিখিত শব্দ, অঙ্গভঙ্গীও ভাষা হিসেবে কাজ করে। তাই ভাষাকে সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করে বলা যায় মৌখিক শব্দ লিখিত শব্দ কিংবা অঙ্গভঙ্গির ইশারায় অর্থবোধক ভাবে মনের ভাব প্রকাশ করে যোগাযোগের একটি প্রতিটি মাধ্যম হলো ভাষা। 


ভাষার বিভিন্ন সংজ্ঞা 
ভাষা কাকে বলে এ নিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানী এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ নানারকম সংজ্ঞা প্রদান করে গেছেন। 
 তাদের মতে ভাষা হলো-
১। ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন - মনুষ্য জাতি যেসব ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টির সাহায্যে মনের ভাব প্রকাশ করে তাকে ভাষা বলা হয়। 

২। ড. মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন- মানুষ বাগযন্ত্রের সাহায্যে সমাজভুক্ত জনগণের বোধগম্য যে সমস্ত ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টি উচ্চারণ করে সে সমস্ত ধনী বা ধ্বনি সমষ্টিকে ভাষা বলা হয়। 

৩। ড. সুকুমার সেন বলেন- মানুষের উচ্চারিত অর্থবহ বহুজনবোধ্য ধ্বনি  সমষ্টি ভাষা। 

৪। ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে- মনের ভাব প্রকাশের জন্য, বাকযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনি দ্বারা নিষ্পন্ন কোন বিশেষ জনসমাজে ব্যবহৃত, স্বতন্ত্রভাবে, অবস্থিত তথাবাক্য প্রযুক্ত শব্দসমষ্টি কে-ই ভাষা বলা হয়। 

ভাষার মূল উপাদান কি কি ?
ধ্বনি হচ্ছে ভাষার মূল উপাদান। ধ্বনিকে ভাষার ক্ষুদ্রতম একক বলা হয়। ধ্বনির লিখিত উপাদানই বর্ণ। 
তবে যে কোন ভাষার মৌলিক উপাদান মূলত চারটি । 
  • ধ্বনি (Sound) 
  • শব্দ (Word) 
  • অর্থ (Meaning) 
  • বাক্য (Sentence) 
একইভাবে একটি ভাষার ব্যাকরণের ও মৌলিক অংশ চারটি। যথা ধ্বনিতত্ত্ব,  শব্দতত্ত্ব,  অর্থতত্ত্ব ,  বাক্য তত্ত্ব ।

ভাষার বৈশিষ্ট্য 
  • ভাষা এক প্রকার ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি ।
  • ভাষা অবশ্যই অর্থপূর্ণ হব। 
  • পরস্পরের ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যম । 
  • ভাষা মানুষের স্বভাব ও সভ্যতা প্রকাশ করে । 
  • দেশ, কাল ও পরিবেশভেদে ভাষার পার্থক্য ও পরিবর্তন ঘটে ।
  • যেকোনো ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি ভাষা নয়।শুধুমাত্র অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা শব্দই ভাষা । 

ভাষার প্রকারভেদ 
সাধারণত ভাষার দুটি রূপ রয়েছে। যথা
১। মৌখিক ভাষা বা কথ্য ভাষা । 
২। লিখিত বা লেখ্য ভাষা । 

মৌখিক ভাষা বা কথ্য ভাষা কাকে বলে 

যে ভাষায় আমরা কথা বলার উপায়ের সাহায্যে একে অপরের সাথে ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে অনুভূতি ও আবেগ প্রকাশের জন্য কথা বলি তাকে মৌখিক ভাষা বা কথ্য ভাষা বলে। এক কথায়, মৌখিক ভাষা এমন ভাষা যা মুখে প্রকাশ করা হয়।

মৌখিক ভাষা বা কথ্য ভাষার প্রকার - দুই প্রকার। 
  1. আঞ্চলিক ভাষা
  2. সর্বজনীন ভাষা
আঞ্চলিক ভাষা কি?
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভাষা রয়েছে। ভৌগোলিক দূরত্ব, সামাজিক অবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ধর্ম প্রভৃতি কারণে একটি অঞ্চলের ভাষা অঞ্চল ভেদে ভিন্ন হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই ধরনের ভাষাকে আঞ্চলিক ভাষা বলা হয়। একটি আঞ্চলিক ভাষা একটি স্থানীয় ভাষাকে বিভিন্ন রূপে প্রকাশ করে তাই একে উপভাষাও বলা হয়।

যেমন নোয়াখালী জেলার গ্রামাঞ্চলে 'টাকা'কে 'টেকা' বলা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে 'লাডকা' শব্দের উল্লেখ আছে- চিমড়া, পোলাও, বেটা, পুট। একইভাবে 'মেয়ে' শব্দটি বলা হয়: মাইয়া, ছেদি, ছেমরি, পুরি। উদাহরণস্বরূপ, একই অর্থ সহ শব্দগুলি অঞ্চলের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশ করা হয়।

আঞ্চলিক ভাষার বৈশিষ্ট্য
  • একটি আঞ্চলিক ভাষা হল একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের বাসিন্দাদের দ্বারা ব্যবহৃত ভাষা।
  • একটি আঞ্চলিক ভাষা এলাকার মানুষের উচ্চারণ এবং বাক্য গঠনের উপর নির্ভর করে।
  • একটি স্থানীয় ভাষা একটি মৌখিক ভাষা। তবে এটি লিখিতভাবেও করা যেতে পারে।
  • এটি একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের লোকদের লোক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে বোঝায়।
  • আঞ্চলিক ভাষায়, কিছু শব্দ সাধুরিতি বা চলমান আচার হিসাবে গৃহীত হয়।
  • আঞ্চলিক ভাষা পরিবর্তনশীল।
  • স্থানীয় ফর্ম খাঁটি.
  • আঞ্চলিক ভাষা গণসাহিত্য তৈরির জন্য উপযোগী।
  • একটি অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা কঠোর ব্যাকরণগত নিয়ম অনুসরণ করে না।

সার্বজনীন ভাষা কি?
সার্বজনীন ভাষা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের সমস্ত মানুষের মৌলিক ভাষা। যেমন, বাংলাদেশের সব মানুষ বাংলায় কথা বলে, তাই এটি বাংলাদেশের সর্বজনীন ভাষা।

একইভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে সে দেশের প্রধান সরকারি ভাষা একটি সার্বজনীন ভাষা। অন্যদিকে, একটি আন্তর্জাতিক ভাষা হওয়ার কারণে, ইংরেজি সমগ্র বিশ্বের জন্য সর্বজনীন ভাষা।

লিখিত বা লেখ্য ভাষা কাকে বলে 

আমরা যে ভাষায় বিভিন্ন বর্ণমালা/প্রতীক/সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে বই-পুস্তক, চিঠি-পত্র বা অন্যান্য তথ্য ও ভাব লিখে প্রকাশ করি, তাকে লিখিত বা লেখ্য ভাষা বলা হয়। এক কথায়, যে ভাষা লিখে প্রকাশ করা হয় তাকে লিখিত ভাষা বলে। 

লিখিত বা লেখ্য ভাষার প্রকারভেদ- দুই প্রকার। 

  1. সাধু ভাষা
  2. চলিত ভাষা

সাধু ভাষা কাকে বলে 

যে ভাষা রীতিতে ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদ পূর্ণরূপে ব্যবহৃত হয় এবং শব্দগুলো সন্ধিবদ্ধ ও সমাসবদ্ধ হয় তাকে সাধু ভাষা বলে। সাধু ভাষা বাংলা গদ্যের প্রাচীন মার্জিত ভাষা। ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সাধু ভাষাকে সমগ্র বঙ্গদেশের সম্পত্তি বলে আখ্যায়িত করেন এবং এই ভাষাকে সংজ্ঞায়িত করে বলেন- “সাধারণ গদ্য-সাহিত্যে ব্যবহৃত বাংলা ভাষাকে সাধু ভাষা বলে।” 

যেমন-  

  • যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই
  • যৌবনে যখন পৃথিবী সুন্দর ছিল, যখন প্রতি পুষ্পে পুষ্পে সুগন্ধ পাইতাম, প্রতি নক্ষত্রে চিত্রা-রোহিণীর শোভা দেখিতাম, প্রতি মনুষ্য-মুখে সরলতা দেখিতাম, প্রতি পত্রমর্মরে মধুর শব্দ শুনিতাম।

সাধু ভাষার বৈশিষ্ট্য

  • সাধু ভাষায় অনুসর্গ, অসমাপিকা ক্রিয়াপদ, সমাপিকা ক্রিয়াপদ এবং সর্বনাম পদ পূর্ণাঙ্গ রূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন- হইতে, করিলে ইত্যাদি।
  • সাধু ভাষায় সমাসবদ্ধ ও সন্ধি যুক্ত দীর্ঘ শব্দের প্রাধান্য বেশি।
  • সাধু ভাষায় সংস্কৃত বা তৎসম শব্দের প্রয়োগ বেশি। যেমন- গগন, গৃহ, তৃণ, হস্ত, বৃক্ষ ইত্যাদি।
  • এই ভাষা মার্জিত, ভদ্র এবং সর্বজনবোধ্য।
  • সাধু ভাষা অনেকাংশেই কৃত্রিম ভাষারীতি অনুসরণ করে।
  • সাধু ভাষা রীতিতে সংস্কৃত সংখবাচক শব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। যেমন- দশম, একাদশ, দ্বাদশ, উনবিংশ ইত্যাদি।
  • সাধু ভাষার পদবিন্যাস সুনির্দিষ্ট এবং সুনিয়ন্ত্রিত। 
  • সাধু ভাষা বক্তৃতা ও নাটকের সংলাপের অনুপযোগী।
  • এই ভাষা আভিজাত্য ও গাম্ভীর্যের প্রতীক।
  • সাধু ভাষারীতিতে ঋণাত্মক শব্দ, স্বরসঙ্গতি, অভিশ্রুতি, আপনিহিতি, সমীভবন ইত্যাদির ব্যবহার নেই।
  • সাধু ভাষায় বহুভাষন পরিলক্ষিত হয়।

চলিত ভাষা কাকে বলে 

যে ভাষায় ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদ সংক্ষিপ্ত আকারে বিদ্যমান থাকে এবং ছোট সন্ধি ও সমাস যুক্ত হয়, তাকে চলিত ভাষা বলে। বাংলা ভাষাকে কৃত্রিমতা থেকে মুক্ত করে সকলের জন্য সহজ সাবলীল করে তোলাই উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি হয় চলিত ভাষার। বর্তমানে যে ভাষা রীতি সর্বত্র ব্যবহৃত হয় তা-ই চলিত ভাষা।

যেমন-

  • সেই স্কুলে যাচ্ছে।
  • ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল।

চলিত ভাষার বৈশিষ্ট্য

  • চলিত ভাষায় অনুসর্গ, সর্বনাম পদ, সমাপিকা ক্রিয়া ও অসমাপিকা ক্রিয়া সংক্ষিপ্ত রূপে ব্যবহৃত হয়।
  • চলিত ভাষায় দেশি-বিদেশি বা তদ্ভব শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয়। যেমন- ঘর, বাড়ি, হাত ইত্যাদি।
  • এ ভাষার পদবিন্যাস ও বাক্যের গঠন বিশেষ প্রকৃতির এবং সুনিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট নয়।
  • চলিত ভাষায় সন্ধি ও সমাসবদ্ধ শব্দ ভেঙে লেখা হয়।
  • চলিত ভাষা তুলনামূলক হালকা ও সহজে বোধগম্য।
  • চলিত ভাষায় সংস্কৃত সংখ্যাবাচক শব্দের ব্যবহার নেই।
  • এ ভাষা রীতিতে বিভক্তির সংক্ষিপ্ত ব্যবহৃত হয়। যেমন- হতে, দিয়ে ইত্যাদি।
  • চলিত ভাষা ব্যাকরণের কঠিন নিয়ম মেনে চলেনা, তাই এটি পরিবর্তনশীল।
  • বক্তৃতা, নাট্য সংলাপ ও আলাপচারিতায় চলিত ভাষা উপযুক্ত।
  • চলিত ভাষায় স্বরসঙ্গঁতি, অভিশ্রুতি,  অপনিহিতি, ও সমীভবনের প্রয়োগ বেশি।
  • এ ভাষায় ঋণাত্মক ও দ্বৈত শব্দের প্রাধান্য বেশি।
  • চলিত ভাষা শিক্ষিত ভদ্র সমাজের মৌখিক ও লেখ্য ভাষা।

ভাষার কাজ কি

ভাষা কাকে বলে- তার সংজ্ঞা থেকেই বোঝা যায়, ভাষা প্রধান কাজ হলো মনের ভাব প্রকাশ করা। এছাড়াও ভাষার বেশ কয়েকটি প্রধান কাজ রয়েছে। যেমন-

  • ভাষার মানুষের আনন্দ-অনুভূতি, আবেগ, রাগ, অভিমান ইত্যাদি প্রকাশ করে।
  • ভাষার মাধ্যমে সংস্কৃতির সম্প্রসারণ ও সমন্বয় ঘটে।
  • ভাষা বার্তা বহন ও প্রেরনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য পূরণ করে।
  • ভাষার মাধ্যমে একজনের সাথে অন্যজনের যোগাযোগ স্থাপন হয়।
  • একটি জাতির সভ্যতা ও সংস্কৃতি তুলে ধরতে ভাষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • জ্ঞান অর্জন, তথ্য রক্ষণাবেক্ষণ, সাহিত্যচর্চা ইত্যাদি প্রয়োজনে ভাষা অপরিহার্য।
  • ভাষা মানুষের দেশ, জাতি, ধর্ম ইত্যাদি পরিচয় বহন করে।
  • ভাষা মানুষের আদেশ-নিষেধ, গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদনে বিশেষ প্রভাব ফেলে।
  • ভাষার মাধ্যমে একটি পরিবার ও একটি সমাজের মধ্যে সুসম্পর্কে গড়ে উঠে।
  • মানুষের জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে ভাষার ব্যবহার বেঁচে থাকাকে সহজ করে দেয়।

বিশ্বের নানান ভাষা

বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ৭,১০০ টিরও বেশি ভাষা রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ২৩ টি ভাষায় কথা বলে পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা। বর্তমান বিশ্বে- বাংলা, হিন্দি-উর্দু, ইংরেজি, আরবি, চীনা, স্পেনীয়, রুশ, পর্তুগিজ, জাপানি, ফরাসি ও জার্মান এই ১১ টি বিশ্বের সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা। বিভিন্ন দেশের ভাষার নাম ভিন্ন তবে ভাষা কাকে বলে- তার ব্যাখ্যা অনুরূপ।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ভাষাভাষীর দেশ পাপুয়া নিউ গিনি ও ইন্দোনেশিয়া। পাপুয়া নিউগিনিতে প্রায় ৮৫০ টি এবং ইন্দোনেশিয়াতে প্রায় ৬৭০ টি ভাষায় কথা বলেন স্থানীয়রা।

 কিছু কিছু অধিবাসীদের আঞ্চলিক ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে বংশধরদের অভাবে। অনেক ভাষা মিশে যাচ্ছে সমজাতীয় ভাষার সাথে। সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতি ১৫ দিনে একটি করে ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে।

বাংলা ভাষা কাকে বলে

বাঙালি জাতি বা বাংলাদেশিরা মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য যে ভাষায় কথা বলে তাকে বাংলা ভাষা বলে। বাংলা ভাষায় পৃথিবীর চতুর্থ সবচেয়ে বেশি কথিত ভাষা। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ৩০ কোটিরও অধিক মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। বাংলাকে ঘিরে রয়েছে একটি বিস্তর ইতিহাস। ইন্দো-ইউরোপীয় বা আর্য ভাষা থেকে শুরু করে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন সহ নানা বাধা পেরিয়ে এসেছে আজকের বাংলা ভাষা। 

বাংলা ভাষার ইতিহাস

বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়েছে ইন্দো-ইউরোপীয় বা আর্য ভাষা থেকে। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষারীতিতে বিশ্বের প্রায় ৪৬ ভাগ মানুষ কথা বলে। ধারণা করা হয়, আনুমানিক ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বে রাশিয়ার উরাল পর্বতের পাদদেশ থেকে আর্য ভাষাভাষী মানুষ পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। 

এই আর্য ভাষা থেকে ভাষার দশটি শাখা তৈরি হয়। তন্মধ্যে ইন্দো-ইরানীয় ভাষা একটি। এর একটি অংশ হয় ভারতীয় আর্য ভাষা। এর থেকে মাগধী অপভ্রংশ, তারপর পূর্বী শাখা। এই শাখা থেকে বঙ্গ অসমীয়া এবং ওড়িয়া ভাষার সৃষ্টি হয়। অবশেষে, বঙ্গ অসমীয়া ভাষা থেকে তৈরি হয় আজকের বাংলা ভাষা।

বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও বিকাশ 

বাংলা ভাষার উৎপত্তি থেকে বর্তমান অবস্থা পর্যন্ত তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। যথা-

  1. প্রাচীন বাংলা ভাষা (৯৫০-১৩৫০ খ্রিষ্টাব্দ)
  2. মধ্য বাংলা ভাষা (১৩৫০-১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দ)
  3. আধুনিক বাংলা ভাষা (১৭৬০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত)

ভাষা কাকে বলে এবং ভাষার প্রকারভেদ নিয়ে বিস্তৃত ইতিহাস রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে, কালক্রমে বাংলা ভাষার রূপ পরিবর্তিত হতে হতে বর্তমানে এই ভাষার বর্ণমালা ও শব্দে পরিণত হয়েছে। উন্নাসিক মুসলমানদের কাছে বাংলা ভাষার নাম ছিল ‘হিন্দুয়ানি ভাষা’। 

বাংলা ভাষাকে কালের বিবর্তনে কেউ বলেছেন ‘লোকভাষা’, কেউ বলেছেন ‘প্রাকৃত’ কারও মতে আবার ‘লৌকিক ভাষা’। অধিকাংশ লেখক এই ভাষাকে বলেছেন ‘দেশি ভাষা’ এবং কিছু সংখ্যক লেখক ‘বঙ্গভাষা’, ‘বাঙ্গালা’ বলে উল্লেখ করেছেন বাংলা ভাষাকে। ভারতবর্ষে বাংলার বাইরে এর নাম ছিল ‘গৌড়িয়া’। বর্তমানে আধুনিক যুগে এই ভাষাকে আমরা বলি বাংলা ভাষা। 





Post a Comment

0 Comments